ঢাকা
খ্রিস্টাব্দ

ব্যাংক থেকে নিজের টাকা তুলতেও তদবির!

দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ

স্টাফ রিপোর্টার :

আপডেট : বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১১.১১ পূর্বাহ্ন


নিউজটি দেখেছেনঃ 1793962 জন

  • নিউজটি দেখেছেনঃ 1793962 জন
ব্যাংক থেকে নিজের টাকা তুলতেও তদবির!
ছবি : সংগৃহীত

শুধু মাহবুব আলম না, সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা ঘুরে দেখা যায়, ক্যাশ কাউন্টারের সামনে চেক ভাঙিয়ে টাকা তোলার দীর্ঘ লাইন একরকমের জটলায় পরিণত হয়েছে। লাখ টাকার চেক তো দূরে থাক, পাঁচ হাজার টাকার চেকও ক্যাশ করা যাচ্ছে না।


 

ছেলের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতে রাজধানীর বসুন্ধরা ব্রাঞ্চে গিয়েছিলেন আছিয়া রহমান। মাত্র ৫ হাজার টাকার একটি চেক ভাঙাতে গিয়েও হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হয়েছে তাকে। সময় সংবাদকে আছিয়া বলেন, ‘সকালে ব্যাংকে যাওয়ার পর বলা হলো টাকা নেই, চেক রেখে যান। পরে দুপুরের দিকে ব্যাংকে গিয়ে শুনি আজকে নাকি টাকাই দেয়া হবে না। ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে যদি এত ঝামেলা পোহাতে হয় তাহলে ব্যাংকিং সেবা কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।’



এদিকে প্রভাবশালী বা ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে সখ্য আছে এমন অনেকে তদবির করে টাকা তুলতে পারছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। একদিকে অনেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা পাচ্ছেন না, অন্যদিকে নিজের টাকা তুলতে শাখা ব্যবস্থাপকদের রুমে গিয়ে তদবির করতে হচ্ছে একাংশকে।

 

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহক আলতাফ হোসেন নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে এই সমস্যা চলছে। যেকোনো চেক ভাঙাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলেছিলেন, এ সপ্তাহে তারল্য সংকট অনেকটা কেটে যাবে। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে সংকট আরও প্রকট হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

 


এ ব্যাপারে ব্যাংকটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং রাজধানীর বসুন্ধরা শাখার ব্যবস্থাপক মজুমদার বুরহান আজিম বলেন, সোমবার অনেক প্রতিষ্ঠানের বেতনের টাকা বিতরণ করতে হয়েছে। এতে করে চলমান তারল্য সংকট আরও প্রকট হয়েছে। এছাড়া এতদিন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ধার পাওয়ার বিশেষ সুবিধা এখন আর বলবৎ না থাকায় চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

কবে নাগাদ তারল্য সংকট দূর হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে আজিম বলেন, ২০ সেপ্টেম্বরের আগে সংকট দূর হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। আশা করা যাচ্ছে, আগামী মাসে কিছুটা হলেও সংকট কাটবে।

 

২০১৭ সালে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের মালিকানার বড় একটি অংশ যায় এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে। এরপর টানা কয়েক বছর ধরে ব্যাংকটি থেকে নামে-বেনামে অনেক অর্থ তুলে নিয়েছে এস আলম গ্রুপ। বর্তমানে বড় রকমের আর্থিক ঘাটতির মুখে আছে ব্যাংকটি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে রক্ষিত চলতি হিসাবেও ঘাটতিতে রয়েছে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক।

 

আগস্টের ৫ তারিখ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এস আলম গ্রুপের একের পর এক কুকীর্তি সামনে আসতে থাকে। বিশেষ করে এস আলম গ্রুপ সংশ্লিষ্ট শরীয়াভিত্তিক ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা পর্ষদকে কাজে লাগিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ায় এসব ব্যাংক বর্তমানে ধুঁকে ধুঁকে চলছে।

 

এরইমধ্যে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাফর আলম পদত্যাগ করেছেন। একইসঙ্গে পদত্যাগ করেছেন ব্যাংকটির দুই উপব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবিবুর রহমান ও খোরশেদ আলম। ব্যবস্থাপনা পর্ষদের এই তিনজন এস আলমের খাস লোক বলে পরিচিতি আছে।

 

 

এর আগে ২৫ আগস্ট ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ১১ সদস্যের সাবেক পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ছিলেন এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের জামাতা বেলাল আহমেদ। এছাড়া সাইফুল আলমের বোন বদরুন নেসা আলম ও ভাগ্নে মাহমুদুল আলমসহ আরও পাঁচ আত্মীয় সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের বোর্ডে ছিলেন।

 

সবশেষ ৫ সেপ্টেম্বর ব্যাংকটির নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদ প্রধান কার্যালয়ে এক টেবিলে বসে সভা করেছে। সভায় সভাপতিত্ব করেছেন ব্যাংকটির বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম সাদিকুল ইসলাম।

 

ব্যাংকে সুশাসন নিশ্চিত করা সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের অন্যতম লক্ষ্য উল্লেখ করে চেয়ারম্যান বলেন, গ্রাহকের আস্থা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সবাইকে কাজ করতে হবে। বর্তমান চ্যালেঞ্জিং সময় অতিক্রম করে ব্যাংকের সুদিন ফিরিয়ে আনতে আমানত সংগ্রহ ও খেলাপি বিনিয়োগ আদায়ের জন্য জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা দেন তিনি।


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ এলএসবিডি/হেনা

কমেন্ট বক্স
দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ

স্টাফ রিপোর্টার :

আপডেট : বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১১.১১ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ