News Link: https://www.dailylalsobujbd.com/news/1OI
কোনভাবেই মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে পারছে না সরকার। বছরের পর বছর যেভাবে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে সেভাবে বাড়ছে না আয়। ফলে আয়ের সঙ্গে ব্যয় না মেলাতে পেরে বিপাকে দেশবাসী। গত পাঁচ বছরের মধ্যে দেশে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল ২০২৪ সালের জুলাই মাসে। ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে উঠেছিল মূল্যস্ফীতি। ২০২০ সালের নভেম্বরে সাধারণ খাতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৫২ শতাংশ। এরপর ক্রমান্বয়ে বেড়েছে এটি। ২০২১ সালের নভেম্বরে ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ, ২০২২ সালের নভেম্বরে ৮ দশমিক ৮৫, ২০২৩ সালের নভেম্বরে ৯ দশমিক ৪৯ ও ২০২৪ সালের নভেম্বরে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ হয় মূল্যস্ফীতি।
সর্বশেষ ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি ঠেকেছে ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশে। ২০২৪ সালের নভেম্বরে দেশবাসীকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়েছে খাদ্যপণ্য। এই মাসে খাদ্যখাতে মূল্যস্ফীতির সব রেকর্ড ভেঙে ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশ হয়। অর্থাৎ এক বছর ব্যবধানে ১০০ টাকার খাদ্যপণ্য কিনতে ২০২৪ সালে ১৩ টাকা ৮০ পয়সা বাড়তি খরচ করতে হয়েছে। মূলত অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বিশ্বের অন্য দেশের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি ব্যাপকভাবে বেড়েছিল। শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানসহ বেশিরভাগ দেশ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে এক অঙ্কের ঘরে রাখতে পারলেও ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যর্থ হওয়ার পেছনে অর্থনৈতিক কারণ ছাড়াও আরও নানা বিষয় আছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো বাজার সিন্ডিকেট ও অর্থপাচার। এছাড়া টাকা ছাপানোর মতো পদক্ষেপের কারণে বাজারে অর্থ সরবরাহ থাকায় মুদ্রাস্ফীতিজনিত মূল্যস্ফীতি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘নানান কারণে মূল্যস্ফীতি কমছে না। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির জন্য বাজার সিন্ডিকেটও দায়ী। পাশাপাশি অর্থপাচার পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে। অর্থপাচার না হলে মুদ্রাবিনিময় হার এতো হতো না। অর্থপাচার না হলে ডলারের দাম বাড়তো না। অর্থপাচারের ফলে টাকার মূল্য কমেছে। টাকার মূল্য কমায় জিনিসপত্রের দামও বেড়েছে। বাজার ব্যবস্থাপনা পুলিশিং করা হয়েছে। এতে সুফল পাইনি, কুফল পেয়েছি। পুলিশ দিয়ে বিক্রেতাদের ধমকালে তারা বাজারে আসেনি ভয়ে। ফলে দামও বেড়েছে।’ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘একদিকে টাকা ছাপানো হয়েছে, কিন্তু কাজে আসেনি। বাজার সিন্ডিকেট ও অর্থপাচার না হলে মূল্যস্ফীতি এভাবে গেড়ে বসতো না।
কৌশলে খাদ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা করা হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম একটা মুদ্রানীতি। যাতে খাদ্যের ক্ষেত্রে স্থিতিশীল সহায়ক হতে পারে। কিন্তু চাল-ডালের দাম কমানো কঠিন। বাজার যেভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে, এটা ব্যর্থ কৌশল। বাজার মনিটরিংয়ের নামে পুলিশিং করা হচ্ছে, এটা দিয়ে হবে না।’ ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার ফলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম ও মার্কিন ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যায়। বিশ্ব অর্থনীতি যখন কোভিড-১৯ সংকট কাটিয়ে উঠছিল, তখনই শুরু হয় এ যুদ্ধ। ফলে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী এক ধরনের লড়াই শুরু হয়। বিশ্বব্যাংকসহ বিশ্বের নানান উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা মূল্যস্ফীতি কমাতে উদ্যোগ নেয়। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ জয়ী হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশসহ বেশ কিছু দেশে মূল্যস্ফীতির হার এখনো নাগালের বাইরে।