পাবনার ঈশ্বরদীতে তিন দশক আগে শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগের বিচারিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৯ জন ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ২৫ জনসহ এই মামলার সকল আসামীকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের আবেদন) শুনানি শেষে বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব-উল ইসলাম ও বিচারপতি মো. হামিদুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারী) এই রায় দেন। বিচারিক আদালতের রায়কে হাইকোর্ট অমানবিক উল্লেখ করে আজকের রায়ে খালাস প্রাপ্তদের অবিলম্বে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন।
বিচারিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যাদের খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট তারা হলেন: এ কে এম আক্তারুজ্জামান, মো. জাকারিয়া পিন্টু, মোখলেছুর রহমান বাবলু, রেজাউল করিম শাহীন, শহীদুল ইসলাম অটল, আজিজুর রহমান ফড়িং, শ্যামল, মাহাবুবুর রহমান পলাশ ও শামসুল আলম।
যাবজ্জীবন দণ্ডিত ২৫ জন হলেন—বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম, আজাদ হোসেন ওরফে খোকন, ইসমাইল হোসেন ওরফে জুয়েল, আলাউদ্দিন বিশ্বাস, শামসুর রহমান, আনিসুর রহমান, আক্কেল আলী, মোহাম্মদ রবি, মোহাম্মদ এনাম, আবুল কাশেম, কালা বাবু, মো. মামুন, মামুন-২, সেলিম হোসেন, মো. কল্লোল, তুহিন, শাহ আলম ওরফে লিটন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, লাইজু, আব্দুল জব্বার, পলাশ, আবদুল হাকিম, আলমগীর হোসেন, এ কে এম ফিরোজুল ইসলাম ওরফে পায়েল ও আবুল কালাম।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মজিবুর রহমান। আর আসামিপক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, কামরুজ্জামান মামুন, জামিল আক্তার এলাহী। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মাকসুদ উল্লাহ।
এই মামলার এজাহারে বলা হয়, ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর খুলনা থেকে ট্রেনে ঈশ্বরদী হয়ে সৈয়দপুরের দলীয় কর্মসূচিতে যাচ্ছিলেন শেখ হাসিনা। তাকে বহনকারী ট্রেনটি ঈশ্বরদী স্টেশনে ঢোকার মুহূর্তে ট্রেন ও শেখ হাসিনার কামরা লক্ষ্য করে দুর্বৃত্তরা গুলি চালায় বলে অভিযোগ করা হয়। পরবর্তীতে ঈশ্বরদী রেলওয়ে (জিআরপি) থানার সে সময়কার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাদী হয়ে ছাত্রদল নেতা ও বর্তমানে ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টুসহ সাতজনকে আসামি করে মামলা করেন। পরবর্তীতে আদালত অধিকতর তদন্তের জন্য মামলাটি সিআইডিকে তদন্তের জন্য দিলে ৫২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। এতে নতুন করে স্থানীয় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়।
২০১৯ সালের ৩ জুলাই পাবনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক রোস্তম আলী এই মামলায় ৯ জনের ফাঁসির আদেশ দেন। এছাড়া ২৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১৩ জনকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে যাবজ্জীবন সাজার আসামিদের ৩ লাখ টাকা এবং ১০ বছরের সাজার আসামিদের এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।
বিচারিক আদালতের রায়ের পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে, আসামিরা আপিল করেন। সে ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শেষে আজ রায় দিলেন হাইকোর্ট।