ঢাকা
খ্রিস্টাব্দ

জাতীয় নির্বাচন ঘিরে সন্ত্রাস প্রতিরোধে বিশেষ নজরদারি ও অভিযানের প্রস্তুতি

শীর্ষ সন্ত্রাসীদের গতিবিধি নিবিড় পর্যবেক্ষণ; জামিনে মুক্ত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে সরকার
দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ

স্টাফ রিপোর্টার | দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ
ফেনী
সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২.৪৪ পূর্বাহ্ন

আপডেট : সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২.৪৫ পূর্বাহ্ন


নিউজটি দেখেছেনঃ 116815 জন

  • নিউজটি দেখেছেনঃ 116815 জন
জাতীয় নির্বাচন ঘিরে সন্ত্রাস প্রতিরোধে বিশেষ নজরদারি ও অভিযানের প্রস্তুতি
--- কোলাজ ছবি। গ্রাফিক: দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ।


ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জামিনে মুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কার্যকলাপের ওপর নজরদারি জোরদার করেছে সরকার। সাম্প্রতিক এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে এ বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সন্ত্রাসীরা পুনরায় অপরাধে জড়ালে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার ও আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, পুলিশ সদর দপ্তর, বিজিবি, কোস্টগার্ড, এনএসআই, ডিজিএফআই ও স্পেশাল ব্রাঞ্চকে (এসবি) সমন্বিতভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নিষিদ্ধ সংগঠন এবং হিযবুত তাহরীরের সদস্যদের ওপর কড়া নজরদারির নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

বিশেষভাবে নজরে রাখা হচ্ছে জামিনে মুক্ত থাকা হিযবুত তাহরীরের সদস্যদের। এদের অনলাইন তৎপরতা রোধে পাল্টা বক্তব্য প্রচারে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও ইসলামি বক্তাদের যুক্ত করা হচ্ছে। কোরআন-হাদিসের আলোকে ব্যাখ্যা তুলে ধরা হবে জুমার খুতবা, ওয়াজ মাহফিল এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

অস্ত্রের লাইসেন্সে কড়াকড়িঃ
নির্বাচন সামনে রেখে নতুন করে সাধারণ নাগরিকদের অস্ত্রের লাইসেন্স না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কেবল সরকারি কর্মকর্তা ও অনুমোদিত সিকিউরিটি সার্ভিসগুলোই নতুন লাইসেন্স পাবে। বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

চাঁদাবাজ ও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামির তালিকাঃ
দেশজুড়ে চাঁদাবাজদের তালিকা তৈরি করে তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিদের ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পথ বন্ধ করতে ডিজিএফআইসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে তৎপর থাকতে বলা হয়েছে।

বিশেষ নজরদারিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পঃ
মিয়ানমার থেকে বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের অবস্থান ক্যাম্প এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বা গুজব রটনা প্রতিরোধে বিশেষ নজরদারির নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সরকার মোহাম্মদ শামসুদ্দিন বলেন, "নির্বাচনের সময় জামিনে থাকা সন্ত্রাসীরা সক্রিয় হলে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে পড়তে পারে। তাই সরকার যে নজরদারি করছে, তা অবশ্যই সময়োপযোগী ও প্রশংসনীয়। তবে কেবল নজরদারি নয়, তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা জরুরি।"

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, "বাংলাদেশে জামিনে মুক্ত অনেক সন্ত্রাসী পূর্বেও অপরাধে জড়িয়েছে। তাই তাদের ওপর কঠোর নজরদারি এবং আইনি কাঠামো শক্তিশালী করাই হবে কার্যকর পদক্ষেপ।"

পুলিশের সাবেক আইজি মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, "নজরদারি সরকারের স্বাধীনতা। জামিন ব্যক্তিগত অধিকার হলেও, জামিনের শর্ত লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া সরকারের দায়িত্ব।"

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. রাশেদা রওনক খান বলেন, "নির্বাচনের সময় সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণ না করলে সুষ্ঠু ভোট প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নির্ভর না করে স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করা ও রাজনৈতিক দলগুলোর ওপরও দায়িত্ব চাপানো জরুরি।"

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের এই তৎপরতা নির্বাচনী সহিংসতা, জবরদস্তিমূলক প্রভাব বিস্তার ও ভোটকেন্দ্র দখলের মতো ঘটনা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে কেবল নজরদারিতে নয়, আইনি কাঠামো, গোয়েন্দা তৎপরতা এবং জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ নির্বাচন আয়োজনই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ এলএসবিডি/এনকেডি

কমেন্ট বক্স
বাংলাদেশ | জাতীয়
দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ

স্টাফ রিপোর্টার | দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ
ফেনী
সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২.৪৪ পূর্বাহ্ন
আপডেট : সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২.৪৫ পূর্বাহ্ন